সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: বরগুনার পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার ভোর রাতে। নিহত হন সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি নয়ন বন্ড নামে পরিচিত। তিনি বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার মামলা এক নম্বর অভিযুক্ত। এই মামলায় নয় জন গ্রেফতার রয়েছে।
কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেছেন, “পুলিশ সেখানে বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছিল।”বরগুনার এই ঘটনা ছাড়াও কক্সবাজারের টেকনাফে একটি ইউনিয়নের একজন কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও আজ ঢাকার অদূরে গাজীপুরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের কথা পুলিশ বলেছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে বলেছে, গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২০৪ জন নিহত হয়েছে।সংস্থাটি আরও বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাগুলোর প্রায় একইরকম বর্ণনা তুলে ধরে।মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকেই একটা সমাধান হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে বলে এখন তাদের মনে হচ্ছে।”রাষ্ট্র থেকেই সংকেতটা সবাইকে দেয়া হচ্ছে যে, আসলে বিচারের ন্যায় সঙ্গত যে উপায় আছে, সেই উপায়ে আমরা এখন আর সমস্যার সমাধান করতে পারছি না।”
“সেটা করতে পারছেন না বলে যেখানে চাপের মুখে পড়ছে তারা, সেখানে চটজলদি একটা উপায় বের করার চেষ্টা করছেন।”তিনি বলছেন, “বন্দুকযুদ্ধ নামে যেটা শুনি, সেটা কখনও ক্রসফায়ার, কখনও এনকাউন্টার ইত্যাদি নামে শুনেছি। এই ইত্যাদি নামে এটিকে তারা জনসাধারণের কাছে একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে দিয়েছেন এই বলে যে,অভিযুক্তদের এছাড়া আর কোনভাবে দমন করা যাবে না।”
“সেজন্য তারা কখনও কখনও জনসমর্থন হয়তো পাচ্ছেন। কিন্তু এটা যে অন্যায্য বা অসাংবিধানিক – এটা বোঝার মতো পরিবেশটাও তারা কিন্তু আর বজায় রাখছেন না।”সুলতানা কামাল আরো বলেছেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত থাকায় এটাও প্রমাণ হচ্ছে যে আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।তবে এসব বক্তব্য মানতে রাজি নয় সরকার।আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছিলেন, বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে সরকার কাজ করছে।”এসব আসামীদের ধরতে গেলে তারা যখন বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়, এটা সেল্ফ ডিফেন্স।”তিনি বলেন, “এটা আইনের মধ্যে আছে যে, সেল্ফ ডিফেন্সে [আত্মরক্ষায়] গুলি করা যায়। তাতে যদি তারা মরে, এটাকে কেউ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বললে সেটা ঠিক হবে না।”
“তারপরও আমরা সব বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা থেকেই বিভিন্ন অপরাধের মামলার এসব আসামীদের ধরার চেষ্টা হয়।”আইনমন্ত্রী মনে করেন, বিচার এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমেনি। একইরকম বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে তারা তুলে ধরছেন ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান হত্যাকাণ্ডসহ সম্প্রতি আলোচিত কিছু ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়কে। – বিবিসি বাংলা
Leave a Reply